সেলজুক গাজী
সেলজুক বেগ একজন ওগুজ তুর্কি যোদ্ধা সেলজুক রাজবংশের স্বনামধণ্য প্রতিষ্ঠাতা। সেলজুকের ব্যাক্তিগত নাম মাহমুদ আল -কাশগরীর দেওয়ান লুঘাট আল তুর্ক এবং দেদে করকুট বইয়ে সেলক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
সেলজুকের বুৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে :
সেলিক যার অর্থ ছোট বন্যা
সালুক যার অর্থ ছোট ভাসা
সালু যার অর্থ বিতর্কিত
হাঙ্গেরিয়ান তুর্কিবিদ লেসলি রেসোনিয়ার মতে তার নাম সেলসিক হিসাবে পড়া উচিত। তার নাম নিয়ে ইতিহাসবিদরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।
উৎপত্তি
সেলজুক ছিলেন তুয়াক বেগ এর পুত্র , যা তার কাজের দক্ষতার কারণে তৈমুর আলীগ (যার অর্থ লোহার ধনুক ) নামে পরিচিত। ওগুজ সংস্কৃতিতে তীর এবং ধনুকে সরভোমত্বের চিহ্ন হিসাবে দেখা হয় এবং দুকাকের ডাকনাম বিবেচনায় সে একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেননা কিন্তু একজন সর্বাধিনায়ক ছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাই দুকাক ছিলেন একজন শক্তিশালী রাজনীতিক এবং ওগুজ ইঅবগু রাজ্যের দারুন ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী ছিলেন এবং ৯২৪ সালের দিকে মারা যান।
জন্ড এ অভিবাসন
ওগুজ এযাবগু রাজ্যের অঞ্চলে বসবাসকারী তার গোত্রের লোকদের মধ্যে সেলজুকের প্রচুর ক্ষমতা এবং প্রভাব ছিল। সেলজুক এবং ওগুজ এযাবগুড় মধ্যে সম্পর্কটি এমন একটি ঘটনা দ্বারা ছায়া ফেলেছিলো যা নির্ভরযোগ্য উৎসের অভাবে সুপরিচিত নয়। তা সত্ত্বেও সেলজুক ওগুজ এযাবগু রাজ্য ত্যাগ করেন এবং তার উপজাতি সহ সির দরিয়ার বাম তীরে অবস্থিত জন্ড শহরে চলে আসেন। এটা গুজব যে এই অভিবাসনের সময় সেলজুক গাজীর সাথে ১০০ ঘোড়সওয়ার ১৫০০ উট এবং ৫০০০০ ভেড়া ছিল। যদি প্রত্যেক ঘোড়সওয়ার একটি পরিবারের সমান হয় তাহলে সেলজুক যারা জন্ড এ স্থান্তরিত হয়েছিল তারা সম্ভবত ৫০০ জনের একটি ছোট যাযাবর সম্প্রদায় ছিল।১০ থেকে ১৩ শতাব্দীতে জন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর ছিল। জন্ড ছিল মুসলিমদের জন্য একটি অপক্ষাকৃত জনপ্রিয় গন্তব্য এবং ট্রান্সকিয়ানা থেকে আসা ধর্ম প্রচারকদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাবসায়ীদের জন্য। সেলজুক তার ওগুজ গোত্রের সাথে এক সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। এই ঘটনা ৯৮৫-৯৮৬ এর মধ্যে ঘটে,যখন সেলজুক জন্ড এ স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং ৯৯২ এর আগে যখন সেলজুক সামানীয়দের সাহায্য করার জন্য ট্রান্সস্ররিয়ান চলে যাবে।
ইসলাম গ্রহণ করার পর সেলজুক বার্ষিক কর আদায়ের জন্য ওগুজ এঅবগু কর্তৃক জন্ড এ প্রেরিত কর্মকর্তাদের বহিস্কার করে বলেন মুসলমানরা কাফেরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে না এবং অমুসলিম তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এটি আল বাহাকি দ্বারা প্রমাণিত হতে পারে যিনি সেলজুক বেগকে আল গাজী আল মালিক (যার অর্থ শাসক এবং ধর্মীয় যোদ্ধা ) বলে থাকেন।
এই সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল সেলজুকের বড় ছেলে মিকুলের মৃত্যু যিনি ছিলেন গ্রেট সেলজুক সম্রাজের প্রতিষ্ঠাতা তুঘ্রিল বেগ এবং চাগরি বেগের পিতা ছিলেন। এই ঘটনার পর মিকুলের স্ত্রী সেলজুকের অন্য ছেলে ইউসুফকে বিয়ে করেন। পুরাতন তুর্কি ঐতিহ্য অনুসারে তার দুই পুত্র তার দাদা সেলজুক বেগ দ্বারা লালিত পালিত হয়।
সমানিডদের সাথে সম্পর্ক
সেলজুক গাজী যিনি জন্ড এবং তার আশাপাশে তার যুদ্ধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জণ করেছিলেন,ধীরে ধীরে ট্রান্সক্রিয়াতে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে শুরু করেন। কারা খনিদ হাসান ,সুলাইমান বুগরা খান সমানিদ শহর বুখারা দখল করেন ,সমানিদ সেলজুককে বুঘরা খানের বিরুদ্ধে সাহায্য করার অনুরোধ করেন। এর পর সেলজুক তার ছেলে আরসালিনকে ট্রান্সকিয়ানা পাঠান। যেহেতু সেলজুক এই সময় বুড়ো হয়ে যাসচিলো তাই প্রশাসনটি আসলে তার বড় ছেলে আরসলিন এর হাতে ছিল। ইতিমধো সামনি রাজ্যে যা তার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিলো করা খানিদের দ্বারা ঘন ঘন নতুন আক্রমণের শিকার হয়েছিল যা আর্সালানকে তার সামরিক দক্ষতা প্রমান করার সুযোগ দিয়েছিলো। ফিকিক ,আবু আলী সিমকার এবং বেক তাজান ,এবং কারা খানিদরা যারা ট্রান্সক্রিয়াতে প্রবেশ করে এবং দ্বিতীয়বার বুখারা দখল করে ,সামসান রাজ্যে অভ্যন্তরীন অশান্তিতে কাঁপছিলো সে সময় আরসালিনের অধীনে সেলজুক সমানি রাজবংশের শেষ সদস্য আবু ইসমাইল আল মুনতাসির (১০০০-১০০৫) কে সামরিক সহায়তা প্রদান করেন। যদিও আল মুনতাসির সেলজুকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতায় ইলিগ খান নাসরের নেতৃত্বের কারা খানিদ সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে কিছু সাফল্য অর্জন করেছিল ,কিন্তু তিনি সামানী রাজ্যের পতন রোধ করতে পারেননি। এই ঘটনা পুরো ট্রান্সকিয়ানা কারা খানিদ প্রশাসনের অধীনে আসেন এবং সেলজুকদের করা খানিদদের প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিতে হয়।খাজাদের সাথে সম্পর্ক
কিছু সূত্র অনুসারে অনুমান করা হয় যে,সেলজুক খাজার সেনাবাহিনীতে একজন অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এই সূত্রগুলো সেলজুকদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে রেকর্ড করে যে ঢুকাক খাজার মেলিককের সাথে সংযুক্ত। এই রেকর্ডগুলি যেগুলি মেলিক -নামা দ্বর্থক বলে মনে হয় তা ইবনে হাসাল পুনরাবৃত্তি করেছিলেন যিনি তুগরুল বেগের সময় তার কাজ লিখেছিলেন খাজাদের সাথে সেলজুকের সম্পর্ক নিয়ে কোনো সন্দেহ রাখে না। সম্পদের অভাবের কারণে এই সম্পর্ককে প্রকৃতি প্রকাশ করা বা এর কাঠামোকে পুরোপুরি সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব নয় ,তবুও এই সম্পর্কটি ওগুজ এঅবগু রাজ্যের মাধ্যমে করা হয়েছিল নাকি তা স্বাধীন তা বলা কঠিন। যাইহোক যদি সেলজুক এবং খাজাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করা হয় তবে এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তারিখ অবশই ১০ শতাব্দীর দ্বিতীয় চতুর্তঅংশের মাঝামাঝি হতে পারে যখন খাজার খাগনাতে সামরিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। ফলস্বরূপ এটা সম্ভব যে ডুয়াকের সরাসরি বা ওগুজ এঅবগু রাজ্যের মধ্যেমে তাদের পতনের সময় খাজারদের সাথে রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক ছিল এবং এই স্মৃতিগুলো কেবল পরিবারে মৌখিকভাবে বলা যেতে পারে সেলজুক ইতিহাসের অস্পষ্ট রেকর্ডগুলি প্রতিফলিত করে প্রায় দেড়শো বছর পর লেখা হয়।
সেলজুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠা
মিকুলের পুত্র তুঘ্রিল ও চাগরির অধীনে সেলজুকরা খুরাসানে চলে আসে। গজানভীদের স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অভিযান চালানো সেলজুকদের থামানোর প্রচেষ্টা ২৩ মে ১০৪০ তারিখে দন্ডনকান যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে। বিজয়ী সেলজুকরা খুরাসানের শাসক হয়ে ওঠে এবং ট্রান্সকিয়ানা ও ইরান জুড়ে তাদের ক্ষমতা বিস্তর করে। ১০৫৫ সালের মধ্যে তুঘ্রিল বাগদাদে তার নিয়ন্ত্রণ বিস্তিত করে নিজেকে আব্বাসীয় খলিফার চ্যাম্পিয়ন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন ,যিনি তাকে সুলতান উপাধিতে সম্মানিত করেন। পূর্ববর্তী শাসকেরা হয়তো এই শিরোনামটি ব্যবহার করতেন কিন্তু সেলজুকরা তাদের মুদ্রায় এটি প্রথম লিখেছেন বলে মনে করা হয়।
মৃত্যু
সেলজুক গাজী প্রায় ১০০ বছর বয়সে জন্ড এ ১০০৯ সালের দিকে মারা যায়। তার তিন জীবিত পুত্রের মধ্যে একজন আরসালান পুরাতন ঐতিহ্যের অধীনে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার পুত্র আরসালিন যার এআইবগু উপাধি ছিল ,তাকে ইউসুফ সাহায্য করেছিলেন ,যার ইনোল উপাধি ছিল এবং মুসা যিনি তার ভাইদের কাছ থেকে ইনান উপাধি পেয়েছিলেন। এদিকে মিকুলের পুত্র তুঘ্রিল এবং চাগরি ১৪-১৫ বছরে প্রশাসনে তাদের স্থান গ্রহন করেন।