গ্রেট সেলজুক সাম্রাজ্য
১০৩৭-১১৯৪
১০৯২ সালে সেলজুক সম্রাজ্য সর্বোচ্চ মাত্রায়, মালিক শাহের মৃত্যুর পর।
প্রচালিত ভাষা :
ফার্সি : ওগুজ তুর্কি , আরবি
ধর্ম :
সুন্নি ইসলাম
সরকারি বাস্তবতা : স্বাধীন সালতানাত - খিলাফতের অধীনে।
খলিফা:
আল কায়েম (১০৩১-১০৭৫), আল নাসির (১১৮০-১২২৫)
প্রথম সুলতান:তোগরুল প্রথম (১০৩৭-১০৬৩) শেষ সুলতান : তোগরুল তৃতীয় (১১৭৪-১১৯৪)
ইতিহাস: ১০৩৭ তুগরুল ও চাগরি বে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা গঠন করেন। যুদ্ধ : দন্ডাকানের যুদ্ধ (১০৪০), মানজিকের্ট যুদ্ধ (১০৭১), প্রথম ক্রুসেড (১০৯৫-১০৯৯), কাটোয়েনের যুদ্ধ (১১৪১)
এলাকা : ১০৮০ আনুমানিক ৩,৯০০,০০০ কি মি
গ্রেট সেলজুক সম্রাজ্য একটি উচ্চ মধ্যযুগীও তুর্কি - ফার্সী সুন্নি মুসলিম সম্রাজ্য, ওগুজ তুর্কি কিনিক বসতি থেকে উদ্ভুত। সেলজুক সম্রাজ্য পশ্চিমে আনাতোলিয়া এবং লেভেন্ট থেকে পূর্বে হিন্দুকুশ এবং উত্তরে মধ্যে এশিয়া থেকে দক্ষিণে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল সম্রাজ।
সেলজুক সম্রাজ্য ১০৩৭ সালে তুগরিল (৯৯০-১০৬৩) এবং তার ভাই চাগরি (৯৮৯-১০৬০) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরাল সাগরের কাছে তাদের জন্মভুমি থেকে সেল্যুকরা প্রথমে বাগদাদ এবং পূর্ব আনাতোলিয়া জয় করার আগে প্রথমে খোরাসান এবং তারপর মূল ভূখণ্ড পারস্য অগ্রসর হয়। সেলজুকরা ১০৭১ সালে মন্জিকার্টের যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তারপর বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য থেকে এটি কুক্ষিগত করে আনাতোলিয়ার বাকি অংশ জয় করে। এটি প্রথম ক্রুসেডের (১০৯৫-১০৯৯) অন্যতম অনুপেরনা ছিল। ১১৪০ এর দশকে সেলজুক সম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং ১১৯৪ সালের মধ্যে খোয়ারাজমিয়ান সম্রাজ্য দখল করে নেয়।
সেলজুক সম্রাজ্য ও সেলজুক রাজবংশ পূর্ব ইসলামী বিশ্বের ভাঙা রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে একত্রিত করে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ক্রুসেডে মূল ভুমিকা পালন করে। সেলজুকরা যে সময় তাদের প্রভাব ছিলো সেই সময়ের মধ্যে একাধিক শিল্পের সৃষ্টি ও সম্পসারণ নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সংস্কৃতি এবং ভাষায় সেলজুকরা তুর্কি ফার্সি ঐতিহ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল। এমনকি আনাতোলিয়ায় ফার্সি সংসকৃতি রপ্তানি করে। সাম্রাজ্যের উত্তর পরচিমাঞ্চলীয় পেরিফেরাল অংশে তুর্কি উপজাতির বসতি স্থাপন প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আগ্রাসন রোধ করার কৌশলগত সামরিক উদ্দ্যেশ সেই অঞ্চলগুলির প্রগতিশীল তুর্কীকরণে দিকে পরিচালিত করে।
সেলজুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওগুজ তুর্কি যোদ্ধা সেলজুক গাজী। তিনি খাজার সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন। যার অধীনে সেলজুকরা জেন্ড শহরের কাছাকাছি খোয়ারেজমে চলে আসেন, যেখানে তারা ৯৮৫ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মাওমিনদের দ্বারা পরিচালিত খোয়ারেজ সামানীও সম্রাজ্যের নামমাত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৯৯৯ সালের মধ্যে সামানীয়রা ট্রানসকানিয়াতে করা-খনিডদের কাছে পরে কিন্তু গজনভিদরা আক্কাসের দক্ষিণের জমি দখল করে। সেলজুকরা জড়িত হয়ে পড়ে কারা - খানিদের বিরুদ্ধে শেষ সামানীদ আমিরকে সমর্থন করে তাদের নিজস্ব স্বাধীন ঘাঁটি প্রতিষ্টার আগে এই অঞ্চল শাসন করে।
শাসন
সেলজুক ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে মেলিক শাহ প্রথম এর অধীনে ছিল এবং কারাহানিদের এবং গজনিদের উভয়কেই সেলজুকদের অধিপত্য শ্বীকার করতে হয়েছিল। সেলজুকের অধিপত্য ইরান ও ইরাক এর প্রাচীন সাসানীয় অঞ্চলের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এতে আনাতোলিয়া , সিরিয়া ,ও মধ্যে এশিয়ার কিসু অংশ এবং আধুনিক আফগানিস্তান অন্তভুক্ত ছিল। সেলজুক শাসনটি তুর্কি ও মোঙ্গল যাযাবরদের মধ্যে প্রচলিত আদিবাসী সংগঠন এবং একটি ফ্যামিলি ফেডারেশন এর মতো ছিল। এই সংস্থার অধীনে সর্বাধিক পরিবারের শীর্ষস্থানীয় সদস্য পরিবারের সদস্যদের তার ডোমেইনের কিসু অংশ সৈয়ত্বশাসিত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
বিভিন্ন প্রতীক এবং ব্যানারগুলো সেলজুকরা বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে। প্রথম দিকে সেলজুকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ব্যবহার করতো কিন্তু ধীরে ধীরে স্থানীয় মুসলিম চিহ্ন এবং ব্যানার গ্রহণ করে। সাম্রাজ্যের সরকারি পতাকা সম্ববত আব্বাসীয় খেলাফতের অনুরূপ একটি কালো পতাকা ছিলো। পতাকাটি লক্ষণ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল।
রাজধানী শহর
সেলজুকরা ১০৪০ থেকে ১১৫৭ এর মধ্যে এশিয়া এবং মধপ্রাচ্যের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চালায়। এর অধিকাংশ ইতিহাসের জন্য সাম্রাজ্যটি পশ্চিম ও পূর্ব অর্ধেকের মধ্যে বিভক্ত ছিল এবং তাদের একটিও রাজধানী বা রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল না। পূর্বে সেলজুক শাসনের প্রধান আসন ছিল বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের মার্ভ শহর। পশ্চিমে বিভিন্ন শহর যেমন ইসফাহান , বাগদাদ , এবং পরে হামদান সেলজুক শাসকেরা পর্যায়ক্রমে বসবাস ও রাজধানী হিসাবে কাজ করতেন এই পশ্চিমাঞ্চলগুলো ইরাকের সুলতানি হিসাবে পরিচিত ছিল। ১১১৮ সাল থেকে ইরাকের সেলজুক শাসকেরা মহান সেলজুক সুলতান সেন্জারের অধিপত্যকে সীকৃতি দিয়েছিলেন। যারা বেশিরভাগ মার্ভ থেকে শাসন করতেন এবং আজম সুলতান উপাধি দ্বারা পরিচিত ছিলেন - আজম "সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান "।
সংস্কৃতি এবং ভাষা
ঐতিহ্যবাহী পোশাক, ইয়াকুতিয়ে মাদ্রাসা , এরজুরুম , তুরস্ক এর একটি পুরুষ ও মহিলাকে মোম দিয়ে চিত্র কলা।
সেলজুকরা তাদের সম্রাজ্যের শিখরেও স্টেপি সংস্কৃতির উপাদান গুলি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। ওঁগুজ তুর্কি ভাষা দরবারে প্রতিদিনের ভাষা হিসেবে ব্যাবহৃত হতো এবং সম্রাজ্যের জনসংখার দ্বারা ফারসির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হতো। আরবি এবং ফারসি থেকে তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করার জন্য তুগরিল তার উজিরের উপর নির্ভর করেছিলেন এবং তুগরিল ও খলিফার কন্যের বিয়ে তে ওগুজ গান গাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে মাহমুদের মতো সুলতানরা ফারসির পাশাপাশি আরবি বলতে পারতেন। তবে তারা এখনো নিজেদের মধ্যে তুর্কি ভাষা ব্যবহার করেন। তুর্কি ভাষার গুরুত্বের সবচেয়ে উলেখযোগ্য প্রমান হলো বড় তুর্কি আরবি অভিধান বা দেওয়ান লুঘাট আল তুর্ক ,বাগদাদে মাহমুদ আল কাশগরির খলিফা আল মুক্তাদীর জন্য একত্রিত। যাইহোক দিওয়ান ছাড়া ও তুর্কি ভাষায় লেখা কোনো কাজ সেলজুক সম্রাজ্য এর সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মালিকনামা যখন তুর্কি মৌখিক বিবরণ থেকে সংকলিত হয়েছিল,এটির মূল কপি ফারসি এবং আরবি ভাষায় লেখা হয়েছিল।
সেনাবাহিনী
প্রাচীনতম সেলজুকদের সেনাবাহিনী শাস্ত্রীয় আব্বাসী যুগের বিখ্যাত তুর্কি সামরিক বাহিনীর অনুরূপ ছিলোনা। তাদের প্রথম আক্রমণ ছিল পরিকল্পিত সামরিক বিজয়ের পরিবর্তে তাদের পরিবার এবং গবাদি পশুর শটে একটি বড় যাযাবর অভিবাসন। তারা কোনো পেশাদার সেনাবাহিনী ছিলোনা ,তবে প্রায় সব প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দের জন্য যুদ্ধই ছিল একটি জীবনযাত্রা।
সেলজুক উজির নিজাম -উল -মূলক কের মতে , মেলিক শাহ প্রথম এর শাসনামলে সর্বভোম তার হাতে একটি বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। সেখানে ছিল তুর্কমেন , মামলুক , একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী, পদাতিক এবং সুলতানের ব্যাক্তিগত প্রহরী। নিজাম মূলক মালিক শাহের বাহিনীতে ৪,০০,০০০ লোক ছিল বলে অনুমান করেন এবং প্রায়ই খরচ কমানোর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন
(সেলজুক সেনা )
সম্রাজ্যের বিভাগ
যখন ১০৯২ সালে প্রথম মালিক শাহ মারা যান , তখন তার ভাই ও মালিক শাহ এর ৪ পুত্র নিজেদের মধ্যে সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি নিয়ে জগড়া করে। মালিক শাহ প্রথম ও আনাতোলিয়ার কিলিজ আরসালান প্রথম তারা রুমের সালতানাত প্রতিষ্টা করেছিলেন এবং সিরিয়ায় তার ভাই তুতুস প্রথম দ্বারা। বাগদাদে মুহাম্মদ প্রথম এবং খোরাসানে আহমেদ সেনজার। যখন তুতুস প্রথম মারা যান তখন তার পুত্র রাদওয়ান এবং দুকাক যথাক্রমে আলেপ্পো এবং দামেস্কো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন এবং একে অপরের সাথে পতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল , সিরিয়াকে পরস্পর বিরোধী আমীরদের মধ্যে বিভক্ত করেছিল।
১১১৮ সালে মেলিক শাহের তৃতীয় পুত্র আহমেদ সেনজার সাম্রাজ্য দখল করেন। তার ভাতিজা প্রথম মুহাম্মাদের পুত্র সিংহাসনে তার দাবি স্বীকার করেননি , এবং দ্বিতীয় মাহমুদ নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেন এবং ১১৩১ অবধি বাগদাদে একটি রাজধানী প্রতিষ্টা করেন, যতসময় পর্যন্ত তিনি আহমেদ সেনজার দ্বারা আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতাচুত্য হন নি।
Nice
ReplyDelete