মুনসুর আলী খান
বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার নবাব নাজিম।
রাজত্ব ২৯ অক্টোবর ১৮৩৮ - ১ নভেম্বর ১৮৮০
বাংলার পূর্বসূরি মুবারক আলী খান দ্বিতীয়।
উত্তরাধিকারী পদ বাতিল , নবাব সৈয়দ হাসান আলী মির্জা খান বাহাদুর মুর্শিদাবাদ এর নবাব হিসাব সফল হন।
জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৮৩০
মৃত্যুবরণ করেন ৪ নভেম্বর ১৮৮৪
স্ত্রীগণ
শামস জোহান বেগম
মালিক জামানি
শাহ উন নিসা
সারা ভ্যানাল
জুলিয়া লুইস
১০১ সন্তান যার মধ্যে ১৯ পুত্র ও ২০ কন্যা তার থেকে বেঁচে ছিলেন।
নবাব সাইয়্যেদ মুনসুর আলী খান বাংলার নবাব ছিলেন ১৮৩৮ সাল থেকে ১৮৮০ সালে তার পদত্যাগ পর্যন্ত এর পর তিনি নবাব হিসাবে তার উপাধি ও পদ ট্যাগ করেন। তার শাসন আমলে তিনি তার শাসিত এলাকাগুলোতে বিভিন্ন নীতি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় আর্থিক সমস্যা নিয়ে পনিবেশিক সরকারের সাথে দ্বন্দের মদ্ধো পড়েন। খান ব্রিটেনে ঘন ঘন দর্শন করতেন এবং সেখানে তিনি অফটন পনিবেশিক সরকারের সাথে বিরোধের বিষয় প্রায়ই তার মামলার আবেদন করতেন। ১৮৮০ সালে খান তার বোরো ছেলের পক্ষে পদত্যাগ করার সিদ্বান্ত নেন।
শুরুর বসরগুলো
নবাব নাজিম মুনসুর আলী খান নবাব মোবারাক আলী খান দ্বিতীয় এবং রইস উন নিসা বেগমের সন্তান। তার বয়স সিলো মাত্র আট বছর যখন তিনি তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন যা ঈদের দিন হয়ে ওঠে। তিনি মুন্তিজাম উল মূলক ,মহাসেন উদ দৌলাহ।,ফেরাদুন ঝা এবং নস্রুত জং উপাধি লাভ করেন তবে তিনি নবাব নাজিম ফেরিদুন ঝা বা জনাব এ আলী নামে জনপ্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে তিন পদত্যাগ করেন এবং নবাব বাহাদুরের কম উপাধি লাভ করেন এবং মহামান্যতার যোগ্যতার ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হন।
নবাব হিসাব রাজত্ব করেন
মনসুর আলী খান তার পিত মোবারাক আলী খান দ্বিতীয় মারা যাওয়ার পর ১৮৩৮ সালে আট বছর বয়সে বাংলার নবাব হন। কিশোর নবাব তার উজির এবং খাজা ফজল মুহাম্মদ প্রধান কাজী হিসাবে নিয়োগ দেন।
জনাব ওW.H এলিয়ট ১৮৩৮ সালের ডিসেম্বরে গভর্নর জেনারেল এর নিযুক্ত প্রতিনিধি , ১৮৩৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজামাত বিষয়ক দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং ছেলে নবাবের যত্ন কর্নেল কনফিল্ডের হাতে চলে যাই। জানুয়ারী ১৮৪০ থেকে ডিসেম্বর ১৮৪৬ সময়কালে অনেক পরিবর্তন হয়েছে ,তিনটি এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে এবং অব্যহতি দেয়া হয়েছে। নবাবের পরিবারের বিষয়গুলি অশান্ত ছিল এবং তাদের সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছিল যখন জনাব টোরেন্স ১৭ ডিসেম্বর ১৮৪৬ সালে গভর্নর জেনারেলের কাসে প্রচুর এজেন্ট নিয়োগ করেছিলেন। নবাব খুব অল্প বয়সে তার বিষয়ে পরিচালনায় অংশ নিতে পারেনি। এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা ঘেরা ছিলো যাদের এক মাত্র ধারণা ছিল স্বার্থ। মিঃ টোরেন্স ১৮৫১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। এবং ১৫ অগাস্ট ১৮৫২ এ মারা যান। নবাব যখন বড়ো হন তখন তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন এবং দেখতে পান যে সমস্ত বিভাগে বিভ্রান্তি রোয়েসে। প্রথম জিনিস যা প্রোয়োজন ছিল অর্থের হিসাব এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের এবং ইউরোপীয় এজেন্ট এবং তাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা। সরকার কিসু তথাকথিত নিজামত তহবিলকে উপযুক্ত মনে করেন এবং নবাবের উপবৃত্তির ব্যাপারে নতুন ব্যাবস্তা করেন। কিন্তু নবাব সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা চেয়েসিলেন এবং সম্পূর্ণ তথ্যের অভাবে যেটাকে তিনি অন্যায় কাজ হিসাবে গণ্য করেছিলিন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলিন। নবাব আস্তে আস্তে বিষয়গুলিতে সক্রিয় আগ্রহ নিতে শুরু করেন এবং অভিযোগ করার জন্য অন্য কিসু খুঁজে পান। যা ১২৫২ সালের সময় কিসু জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্ধারিত ১ লক্ষ টাকার মধ্যে তার ব্যাক্তিগত বরাদ্দ সিলো ৫০০০০ হাজার টাকা অবশিষ্ট পরিবারের অন্যান সদস্যদের জন্য বরাদ্দ ছিলো এবং যে কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা নিজামত ডিপোজিট ফান্ডে স্থানন্তর করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে একটি বড়ো বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। নবাব মুনসুর আলী খান ফেরাদুন ঝা নামে পরিচিত ,নিজামত স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা নবাবের উচ্চ বিদ্যালয় এবং নবাবের মাদরাসা নামে পরিচিত ছিলো। নবাবের উচ্চ বিদ্যলয় ১৮২৫ সালে একচেটিয়া ভাবে নবাবদের সেলে এবং আক্রবর এর জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তিনি ১২২৩ সালে নিজামাত এমবাড়ার নতুন ভবনটি পূর্ণনির্মান করেন। হাজারদুয়ারি প্রসাদের উত্তরমুকের ঠিক সমান্তরালে লক্ষ টাকার বিনিময়ে।
১৮৫৩ সালে ঘোষণা করা হয় যে নবাবের কোনো চুক্তির অধিকার নেই। এটি ১৮৫৪ সালে নবাবের সমস্ত বিশেষ অধিকার বিলুপ্তির পর অনুসরণ করা হয়েছিল। ১১ অক্টোবর ১৮৫৪ সালে নবাবের শুটিং ক্যাম্পে দুই জনকে হত্যা করার অভিযোগে উনিশ জন রক্ষী থেকে কমিয়ে তেরো জন করা হয়। নবাবের পরিচারক আমান আলী খান প্রধান নপুংশক হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন। সুপ্রিম কোর্ট কতৃক সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এবং পরে তারা নবাবের চাকরিতে ফিরে আসেন। কিন্তু সরকার তাদের বরখাস্তর আদেশ দেয়া হয়।
একই বছরে অর্থাৎ ১৭৯৯, ১৮০৫, ১৮০৬, ১৮২২ এর চারটি প্রবিধান এবং আইন তাকে কিসু বিশেষ অধিকার প্রদান করে বাতিল করা হয়েছিল এবং নিজামতের উপর নাজিমের নিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর যেখানে নবাব নাজিম ফেরাদুন ঝা বস্তুগত সহায়তা প্রদান করেছিলন। উনিশ জন প্রহরীর সালাম পুনদ্ধার করা হয়েছিল। ১৮৬০ সালে নবাব ফেরাদুন ঝা তার অসংখ্যা অভিযোগের বিষয়ে ভারতের সচিবকে কাউন্সিলের সৃতিচারণ করেন। কোনো প্রতিকার না পেয়ে নবাব ১৮৬৯ সালে তার দেওয়ান রাজা প্রসন্ন নারায়ণ দেবের পরামর্শের বিরুদ্ধে তার ব্যাক্তিগত সচিব এবং প্ৰধান পরামর্শদাতা মিঃ এইচ.সি.ফক্স তার অভিযোগকে মহামান্য সরকারের কাসে তুলে ধরলো কিন্তু পার্লামেন্ট এ তার অভিযোগের বাতাস চলাচল করলেও খুব কম সাফল্য পায়।
নবাব ইংল্যান্ডে থাকাকালীন মুর্শিদাবাদে নিজামাত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং লোকেরা নবাব নাজিম এর বিরুধে বেশ কিসু দাবি করতে থাকে। সুতারাং ফলস্বরুপ তার সম্পত্তির বিরুদ্ধে সংযুক্তি জারি করা হয়েসিল। ভারত সরকার সেখান থেকে নবাব ও তার সম্পত্তি মামলা ও সংযুক্তি থেকে জমা করার এবং দাবির কিসু অংশ খালাস করার পদক্ষেপ নিয়েছে। দেওয়ানি আদালতে এক্তিয়ার থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়ার আরো উদ্দ্যেশ নিয়ে ভারত সরকার ১৮৭৩ সালে একটি আইন পাস্ করে এবং আইনটির বস্তুগুলো বহন করার উদ্দেশে একটি কমিশনের অধীনে সেখানে নিয়োগ দেয়। কমিশনের মধ্যে একজন ছিল বিউফোর্ড যিনি আগে মুর্শিদাবাদের বিচারক ছিলেন নিজামাত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বিষয়ে তাদের ঘোষণা পত্র জমা দেন। ১৮৭৬ সালের এপ্রিলে নিজামাত কমিশনার গণ বেশ কিসু পাওনাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের পুরুস্কার প্রদান করেন।
বাংলার নবাব উপাধি বিলুপ্ত
এটি ১৮৮০ সাল যখন বাংলার নবাব উপাধি বিলুপ্ত হয়েছিল। ফেরাদুন ঝা যখন ইংল্যান্ড এ ছিলেন তখন তিনি সিকরোটারী অফ স্টেট এর সাথে একটি চুক্তি করেন। চুক্তিতে তিনি ১০ লক্ষ টাকা পেতে সম্মত হন। এটা ছিল তার ব্যাক্তিগত দাবির পূর্ণ তৃপ্তিতে পেনশনের বকেয়া পরিশোধ করা। ব্যাক্তিগত দাবিগুলো ছিল তার নিজের একজনের কাছে এবং যা তিনি চেয়েছিলেন। নবাব নিজামাতের কাছে থেকে অবসর নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তার ব্যাক্তিগত বেতনের বার্ষিক ১০০০০ পাউন্ড স্টালিং তাকে প্রদান করা হয় যেখান তিনি খুশি সেখানে বসবাসের বিকল্প সহ।
ফেরাদুন ঝা ১৮৬৯ সালের ফেব্রুয়ারী তে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে ইংল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮১ সালের অক্টোবরে বোম্বে ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। যাইহোক তার যাত্রা খুব একটা আনন্দদায়ক ছিলোনা কারণ তার বেশির ভাগ সময় ভারত সরকারের আদেশের বিরুধে তার মামলার আবেদন করার জন্য ব্যায় করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এর সমাধান না হওয়ায় নবাব বাংলা ,বিহার ও ওড়িশার নবাব নাজিমের শৈলী ও উপাধি ত্যাগ করেন এবং তার ছেলের পক্ষে পদত্যাগ করেন। এবং বরাবরের মতো তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং প্রতি বছর ১০০০০ পাউন্ডের জীবন পেনশন , ৮৩০০০ এর ব্যক্তিগত উপবৃত্তি এবং ২৫০০০ পাউন্ডের খরচ এর বিনিময় তার পারিবারিক গহনা , সম্পত্তি এবং পিতৃত্বের অনেক কিসু নিস্পত্তি করতে বাধ্য হন।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকারী
ফেরাদুন ঝা মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন যেখনে তিনি হাজারদুয়ারি প্রসাদে কলেরায় মারা যান। তাকে জাফেরগঞ্জ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। যে স্থানে তাকে কাকতালীয় ভাবে দাফন করা হয়েছিল সেই স্থানটি নাজিমদের সমাধির সারিতে একমাত্র স্থান ছিল এবং পরবর্তিতে তার কথা অনুযায়ী ইরাকের কারবালায় সরানো হয়। ফেরাদুন ঝা এর পদত্যাগের পর তার বড়ো ছেলে নবাব সায়্যিদ হাসান আলী মির্জা খান বাহাদুর মুর্শিদাবাদের নবাব নিযুক্ত হন। তার প্রপৌত্র এস্কান্দার মির্জা (তার পুত্র বাহাদুর সৈয়দ ইস্কান্দের আলী এবং তার নাতি মুহাম্মাদ ফাতেহি আলীর ) মাধ্যমে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।
স্ত্রী গণ
মুনসুর আলী খানের ৬ জন প্রধান স্ত্রী ছিল
১ সামছ ই জাহান বেগম
২ মালিকা উজ জামানি বেগম
৩ মেহের লেখা বেগম
৪ শাহ উন নিসা বেগম
৫ শামস উন নিসা বেগম
৬ সারাহ বেগম সাহিবা